বিশেষ প্রতিবেদক, সেন্টমার্টিন থেকে ::
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের মাঝের পাড়ায় সেতারা বেগম নামের এক তরুণীকে (২৩) ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ ওই তরুণীর ভাই বাদী হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। যার সিপি মামলা নং-২২৮/১৮ ইং।
মামলায় মোঃ তৈয়ব (২৭) নামের এক যুবককে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবক হলেন একই গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডের আব্দুর রহিমের ছেলে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের দায়ভার দেন। দীর্ঘসময় তদন্তের পর পিবিআই কর্মকর্তা এস.আই (নিঃ) শাহেদুল্লাহ ১৫ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। পিবিআই কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদনে তরুণীকে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
এতে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাদীপক্ষ। তারা পিবিআই’য়ের দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এই প্রতিবেদন বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কালো টাকার প্রতিবেদন। বাদী নূরুল হক বলেন, ‘প্রতিবেদনে টাকার কাছে আমার বোনের ইজ্জতভ্রষ্ট করা হয়েছে। আমরা আগে থেকে যা সন্দিহান করে আসছি, তাই হল’। বাদী নূরুল হক আরও বলেন, ‘আমরা এই প্রতিবেদন মানিনা। দু’বছর প্রেমের অভিনয় করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার বোনকে ইচ্ছামত ব্যবহার করার পরও নাকি মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে। আমি এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আদালতে নারাজি দিব’।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম সেতারা বেগম বাদীর ছোট বোন। বিবাদী বাদীর পার্শ্ববর্তী ও পাড়ালিয়া হওয়ার সুবাদে ভিকটিমের সহিত প্রেমের সম্পর্ক হয়। ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ভিকটিম বিবাদীকে বিশ্বাস করে তার কাছে নিজেকে সবি দেই। বিবাদী তৈয়বকে ভিকটিমের বাড়িতে কয়েকবার আটকও করা হয়। স্থানীয় শালিসের মাধ্যমে বিয়ে হবে মর্মে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে বিবাদী তৈয়ব পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বাঁধার মুখে ভিকটিমকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করে। বিবাদীরা প্রভাবশালী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এর নিকট আত্মীয় হওয়ায় স্থানীয়ভাবে কোন প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
ওই তরুণীর মা বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, বাবা! তাদের সাথে কিভাবে পেরে উঠব! টাকা দিয়ে তারা সবকিছু জয় করতে চাচ্ছে। আমাদেরকেও টাকা নিয়ে মীমাংসা হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। টাকা দিয়ে তারা আমার মেয়ের ইজ্জতও কিনতে চাচ্ছে। মেয়ের সাথে ছেলেটার খুব গভীর সম্পর্ক ছিল। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা দু’জন দু’জনের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। ছেলেটিও আমার মেয়েকে বিয়ের করবে বলে বিভিন্ন শপথ দেওয়ায় আমরাও বেশি চাপ দেইনি। এখন মেয়েটির কি হবে কিছুই বুঝতেছিনা। ৬ মাস ধরে শুধু চোখের জলে ভাসছে মেয়েটির দিনরাত। কিভাবে সমাজে মুখ দেখাব তাও জানিনা। তরুণীর বাবা আব্দুর রহমান বলেন, আমি কিছুই চাইনা। শুধু মেয়েটির ইজ্জত ফেরত চাই। যে নরপশু আমার অবুঝ মেয়ের ইজ্জত হরণ করে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
ভিকটিম সেতারা বেগম বলেন, বিয়ের লোভ দেখিয়ে তৈয়ব আমার কাছে বিশ্বাস স্থাপন করে আমার ইজ্জতভ্রষ্ট করে এখন সাধু সন্ন্যাসী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এদিকে আমি তথা পুরা পরিবার সমাজে মুখ দেখাতে পারছিনা। এর চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভাল হবে। তৈয়ব যদি আমাকে বিয়ে না করে তাহলে এই জীবন রাখবনা বলে কেঁদে ওঠেন ভিকটিম সেতারা বেগম।
বিবাদী তৈয়ব ও তার পরিবারের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা বাদীপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ করছে বাদীপক্ষ। আদালতে মামলা চলছে আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইয়াছমিন শওকত জাহান রুজি বলেন, ‘একজন নারী তখনই আদালতে আসেন যখন সে পুরাপুরি নিরুপায় হয়ে যায়। একজন নারীর ইজ্জতভ্রষ্ট না হলে সে কখনো ইজ্জতভ্রষ্টের কথা বলতে পারেনা। আমরা আদালতে পিবিআই’র দেওয়া প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিব’।
এই বিষয়ে পিবিআই’য়ের তদন্তকারী এস.আই শাহেদুল্লাহ সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তদন্তে সাক্ষী ও মেডিকেল রিপোর্ট বাদীর পক্ষে আসেনি এখানে আমার কিছু করার নেই।
পাঠকের মতামত: